স্টাফ রিপোর্টার :জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র যাবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোঃ ইউনুস। এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফর সঙ্গী হিসেবে দেশের তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন। তারা হলেন, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, নায়েবে আমির ডা:শফিকুর রহমান এর পক্ষে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এন সি পি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। রোহিঙ্গার সংকট নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এবারই প্রথম এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে ২১ সেপ্টেম্বর রাতের সফর সঙ্গীদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা ত্যাগ করবেন। নিউইয়র্ক পৌঁছবেন ২২ সেপ্টেম্বর। আগামী ২ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার কথা রয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০ তম অধিবেশন আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। জাতিসংঘের তিনটি মূল স্তম্ভ ১।নিরাপত্তা ২।উন্নয়ন এবং ৩।মানবাধিকারের সবগুলোই সমানভাবে এবারের অধিবেশনে গুরুত্ব পাবে। ডক্টর ইউনুস এ অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ বিতর্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দেবেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বিগত এক বছরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সংস্কার ও আগামী দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সত্যিকারের গণতান্ত্রিকএকটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ়প্রত্যয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন।তার বক্তব্যে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান বিশ্বব্যাপী সংবাদ, রোহিঙ্গা সংকট ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব জলবায়ু ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা,কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির ট্যাক্সই হস্তান্তর, এবং সর্বোপরি ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের যুদ্ধ বিরোধী ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস উঠে আসবে। এ বছর জাতিসংঘ অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি কে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর “হাই লেভেল কনফারেন্স অন দা সিচুয়েশন অফ রোহিঙ্গা মুসলিম এন্ড আদার মাইনোরিটি ইন মিয়ানমার” শীর্যক একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মতো সব অংশীদারের অংশগ্রহণে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভার আয়োজনের প্রস্তাব করেছিলেন। ওই প্রস্তাব দ্রুত বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো সর্বসম্মতিক্রমে একটি রেজুলেশন এর মাধ্যমে সাধারণ পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে সভাটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন নতুন সংকটের উত্থানের পরও সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে রোহিঙ্গার সংকটে যে বিশ্বব্যাপী আলোচ্য সূচীতে পিছিয়ে পড়েনি প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে জাতি সঙ্গের উচ্চ পর্যায়ের সভার আয়োজন এবং স্বয়ং জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর তারই প্রমাণ।বাংলাদেশ এ উচ্চ পর্যায়ের সভার সফল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি। অধিবেশন চলাকালে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিবের স্বাগত অভ্যর্থনা যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যর্থনা সহ এ সফরকালে বেশ কয়েকটি দ্বীপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানানো হয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সরকারের বর্তমানে অন্যতম অগ্রাধিকার হলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা এবং সুষ্ঠুভাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা।এ প্রেক্ষাপটে এবারের অধিবেশনে আমাদের কাছে একটি সুযোগ বিশ্ব দরবারে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেপরিচালিত আমাদের চলমান সংস্কার কার্যক্রম এবং গণতন্ত্র অভিমুখে আমাদের যাত্রা কে উপস্থাপন করা।
তথ্যসূত্র:দৈনিক আমার দেশ
দৈনিক দেশ রূপান্তর
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি.।