এম এ নোমান, নিউইয়র্ক থেকে
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মোঃ ইউনুসের যুক্তরাষ্ট্র সফরকে কেন্দ্র করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত বিএনপি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন মুখোমুখি অবস্থানে। বিএনপির তরফ থেকে প্রধান উপদেষ্টা সহ তার সফর সঙ্গীদের এফ কেনেডি বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রধান উপদেষ্টা কে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বিমানবন্দরের সামনে অবস্থান করছে। দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ইউএস পুলিশ। পাল্টাপাল্টি কর্ম সূচির কারণে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে এক ধরনের থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এদিকে ডক্টর ইউনুস নিউইয়র্ক পৌঁছানোর আগে স্থানীয় সময় রাতে জ্যাকশন হাইটস এলাকায় জড়ো হয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নজিরবিহীন উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। তাদের হামলায় বিএনপি’র তিন কর্মী গুরুতর আহত হন। তারা এক বাংলাদেশীর দোকানে ভাংচুর করেন। হামলা থেকে বাঁচতে ওই এলাকার দোকান পাট সহ বাড়িঘরের বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ আসার পর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা জানান,জ্যাকসন হাইটস প্রবাসী বাংলাদেশী অধ্যুষিত একটি এলাকা। এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছুই বাংলাদেশীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে থাকে। সেখানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এমন মারমুখি আচরণে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ডক্টর ইউনূসের নিউ ইয়র্ক সফর কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা এমন আচরণ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ রাজনৈতিক দলের নেতারা নিউইয়র্কের পথে রয়েছেন এমন সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি’র বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হতে থাকেন জ্যাকসন হাইটস এলাকায়। তাদের পদচারনায় মুখরিত হতে থাকে জ্যাকসন হাইটস।
তারা বাংলাদেশ প্লাজার সামনে সমবেত হয়ে খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দিতে থাকেন।রাত আনুমানিক ৮টার দিকে হঠাৎ আওয়ামীলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী বাংলাদেশ প্লাজার সামনের সড়কের বিপরীত পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা কে প্রতিহত করার ঘোষণাও দেয় তারা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হাতা হাতির ঘটনা ঘটে।এই ঘটনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী-বিএনপি নেতা দেওয়ান কাউসার আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ভাষণ দেবেন। তিনি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সফর সঙ্গী করেছেন। আমাদের দলের মহাসচিব ও আসছেন। এটি আমাদের জন্য গর্বের ও আনন্দের।আমরা তাদের সফর উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছি। এগুলো সফল করার জন্য বিভিন্ন রাজ্য থেকে আমাদের কয়েক হাজার নেতা কর্মী বিভিন্ন শহর থেকে নিউইয়র্কে এসেছেন। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা করেছে। আমাদের একজন কর্মীর দোকান ভেঙ্গে দিয়েছে। আমাদের একজন কেন্দ্রীয় নেতা সহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। কাউসার আহমেদ আরো বলেন, আমরা এ দেশের আইনের প্রতি পরিপূর্ণভাবে শ্রদ্ধাশীল। ফলে আমরা আইন হাতে তুলে নেই নি। আমরা পাল্টা জবাব দিলে আওয়ামী লীগের একটি সন্ত্রাসী ও পালাতে পারত না। এতে অন্তর্বর্তী সরকার এবং আমাদের দলের দুর্নাম হত। আমরা এ কারণে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখেছি।
এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক মনিরুল ইসলাম প্রবাসী আরেক বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম, দাবি করেন এসব সন্ত্রাস নৈরাজ্য, তান্ডবের মূল হোতা পলাতক শেখ হাসিনার ছেলেসজীব ওয়াজেদ জয়। তার অর্থায়ন ও ইন্ধনে আওয়ামী লীগ এ ধরনের বেপরোয়া আচরণ করেছে।
হতবাক প্রবাসী বাংলাদেশীরা :
ঘটনা স্হলের তদূরে বসবাস করেন বাংলাদেশী চিকিৎসক ডাক্তার আবুল হাসেম।তিনি বলেন,অনেক বছর দেশে যাইনি। সন্ত্রাস ফ্যাসিবাদ কায়েম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের অনেক ধরনের খবর সংবাদ মাধ্যমে পড়েছি। এখন নিজের চোখে দেখলাম। যুক্তরাষ্ট্রের মত জায়গায় এটা কল্পনাতীত।আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেটা করেছে এটা আমাদের হতভাগ করেছে। এখন আমাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে আওয়ামী লীগ কি কারণে দেশ ছাড়া হল।