শাহ আলী তৌফক রিপন ,বিশেষ প্রতিনিধি:
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় ষাঁড়ের লড়াইয়ের নামে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বসছে জমজমাট জুয়ার আসর। এসব আসরে কোটি টাকারও বেশি বাজি ধরে জুয়া খেলায় মেতে উঠছেন স্থানীয় ও আশপাশের এলাকার জুয়াড়িরা। শুধু তাই নয়, এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কেন্দুয়া পৌর এলাকা ছাড়াও দলপা, সান্দিকোনা, মোজাফরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে নিয়মিতভাবে ষাঁড়ের লড়াইয়ের নামে জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে। এসব আয়োজন সাধারণত সূর্যোদয়ের পরপরই অথবা সন্ধ্যার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে হয়, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
গত রোববার সকালে মোজাফরপুর ইউনিয়নের বটতলা এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্প মাঠে নেত্রকোণা সদর ও কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দুই ব্যক্তির ষাঁড় নিয়ে বড় ধরনের জুয়ার আসর বসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেখানে কোটি টাকারও বেশি বাজি ধরে জুয়া খেলা হয়। এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক জনসমাগম ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
এর একদিন পর সোমবার বিকেলে পৌর শহরের ওশেরপুর মহল্লায় একইভাবে ষাঁড়ের লড়াইয়ের নামে জুয়ার আয়োজন করলে স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দুয়া থানা পুলিশ অভিযান চালায় এবং জুয়ার আসর পণ্ড করে দেয়।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কেন্দুয়া থানার এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক। মোজাফরপুর এলাকা পেমই তদন্ত কেন্দ্রের আওতাধীন হওয়ায় থানা থেকে সেখানে যাওয়া নিয়মবহির্ভূত।”
এ বিষয়ে পেমই তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন জানান, “সকাল বেলায় কারা এসব আয়োজন করেছে, তা আমাদের জানা ছিল না। সাধারণত এসব লড়াই খুব স্বল্প সময়ের হয় এবং খবর পেয়ে আমরা পৌঁছানোর আগেই জুয়াড়িরা পালিয়ে যায়।”
এদিকে, কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই সেলিম বলেন, “ষাঁড়ের লড়াই ছিল এই এলাকার একটি গ্রামীণ ঐতিহ্য। কিন্তু এই লড়াইয়ের আড়ালে যখন জুয়া প্রবেশ করেছে, তখনই তা বন্ধ করা হয়। সম্প্রতি আবারও এসব জুয়ার আসর সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যা উদ্বেগজনক। এতে এলাকার সামাজিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। জুয়াড়ি এবং প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্যের যোগসাজশে এসব আয়োজন হচ্ছে বলে আলোচনায় উঠে এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।”
সচেতন মহলের মতে, এভাবে চলতে থাকলে যুব সমাজ বিপথগামী হবে এবং এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হবে। তাই, এসব জুয়ার আসর বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত অভিযান।