সাহিত্যপাতা ( দৈনিক জনতার ডেক্স)ঃমিলোভা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবিনী, ফিজিক্স ও গণিতের নামী ছাত্রী। সহপাঠী আইনস্টাইনকে তিনি সবার অমতে বিয়ে করেছিলেন। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন। আবার বিতর্কিতও বটে। আনপ্রেডিক্টেবল। নানাদোষে দুষ্ট। স্ত্রী মিলেভা
বিয়ের প্রথম দিকে অনেক কষ্ট করেছেন। আইনস্টাইনের মা তাঁকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে মেনে নেননি, মেধাবী হলেও মিলেভা সুন্দরী নন, পায়ে ছিল খুঁত, শাশুড়ি ‘ডাইনি’ সম্বোধনে তাঁকে লিখেছেন একের পর এক অকথ্য চিঠি।
আইনস্টাইন তখন পেটেন্ট অফিসে সামান্য চাকরি করছেন। সেই দুঃসময়ে মিলেভা আগলে রাখছেন সংসারকে, সামলাচ্ছেন সন্তানদের। “ওদিকে আইনস্টাইন অফিসের সময় চুরি করে দিস্তার দিস্তা সাদা কাগজ ভরিয়ে ফেলছেন গণিতের আঁকিবুঁকিতে। শেষ পর্যন্ত ১৯০৫ সালে এসে মোড় ঘুরে যাচ্ছে আইনস্টাইনের জীবনের। একে একে পাঁচটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করছেন তিনি। একটি পরমাণুবিষয়ক, একটি আলোক তড়িৎক্রিয়ার ব্যাখ্যা, আর তৃতীয়টি বিখ্যাত থিওরি অব রিলেটিভিটি। এরপরই নড়েচড়ে বসছে বিজ্ঞানবিশ্ব। আইনস্টাইনকেও আর চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না। সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক কাম অধ্যাপকের পদে চাকরি পাচ্ছেন। পিএইচডিও জুটে যাচ্ছে। তখন আইনস্টাইনের সংসার সুখে ভরে ওঠা উচিত ছিল। কিন্তু হয়নি।”
প্রথমদিকের পেপারগুলো সম্পর্কে প্রেসের সামনে আইনস্টাইন বলতেন, “এগুলো ‘আমাদের’ কাজ। আমার আর আমার স্ত্রীর।” পরে অবশ্য সেই বয়ান পালটে যায়। পরে আইনস্টাইন যত উঠেছেন খ্যাতির শিখরে, মিলেভা ততই হারিয়ে গেছেন অন্দরে, সংসার সন্তানদের প্রতিপালনে। পরে আইনস্টাইন একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়েছেন, প্রেমে পড়েছেন, তাঁকে ঘিরে ধরেছে মহিলারা, তিনিও প্রশ্রয় দিয়েছেন। স্বামী স্ত্রীর দূরত্ব ততই বেড়েছে। শেষে ছেলেমেয়েদের মুখ চেয়ে আইনস্টাইন একছাদের তলায় থাকতে সম্মত হচ্ছেন বটে, কিন্তু স্ত্রীকে সই করতে বাধ্য করছেন অদ্ভুত সব শর্তে। আইনস্টাইনের জামাকাপড় থেকে খাবারদাবার, পড়ার টেবিল থেকে যাবতীয় সুন্দরভাবে বানাতে ও গুছিয়ে রাখতে হবে মিলেভাকে। আইনস্টাইনের পড়ার ডেস্কে বসতে পারবেন না মিলেভা। সন্তানদের দেখাশোনা বা সংসারের কাজ, আইনস্টাইন কিছুই করবেন না। কথা বলার সময় আইনস্টাইন যখনই চাইবেন মিলেভাকে চুপ করে যেতে হবে। এমনকি, স্বামীর সঙ্গে কোথাও বেরনো বা শারীরিক মানসিক সঙ্গেরও অধিকার থাকবে না মিলেভা’র। এমন অপমানকর অদ্ভুত সম্পর্কে থাকতে অনেকবছর বাধ্য করেছেন স্ত্রীকে। আইনস্টাইন তখন মহাপরাক্রমশালী, মিলেভা মুখ বুজে মেনে নিচ্ছেন এই অত্যাচারকে। শেষে বিচ্ছেদ করছেন আইনস্টাইন, বিয়ে করছেন তুতো বোন এলসা’কে। সংবাদপত্র ছেয়ে যাচ্ছে আইনস্টাইনের Theory of Infidelity তে।
আইনস্টাইন বেহালা বাজাতেন পেশাদার শিল্পীদের মত, স্কুলজীবনে ছিলেন মধ্যমানের ছাত্র, অঙ্ক আর ফিজিক্স ছাড়া বাকি বিষয়ে থাকত গড়পড়তা নম্বর। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষায় অকৃতকার্যও হয়েছিলেন। আবার তিনিই পরে আবিষ্কার করেছেন দুনিয়া কাঁপানো Theory of Relativity, একই বছরের মধ্যে লিখেছেন একাধিক যুগান্তকারী পেপার। তা বুঝতে মানুষের এত সময় লেগেছিল যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন অন্য বিষয়ে। এতেই প্রমাণিত হয়, স্কুলের নম্বর দিয়ে ভবিষ্যৎ মাপা যায় না।
মৃত্যুর পরও তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে থাকা আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক চুরি করেন ডাক্তার টমাস হার্ভি। । ৪০ বছর আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের উপর তিনি নানা পরীক্ষা চালান এবং দাবি করেন আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের থেকে ভিন্ন। ১৯৯৮ সালে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের অবশিষ্ট অংশ থমাস ফিরিয়ে দেন যা এখন রয়েছে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার মাটার মিউজিয়ামে।
ইজরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্ট কিয়াম ওয়াইজম্যান মারা যাওয়ার পর আইনস্টাইনকে ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি হননি। বলেছিলেন, “মানুষের সঙ্গে সহজ যোগাযোগই করতে পারি না আমি। প্রেসিডেন্ট কী করে হব?”
শেষ বয়সে একজন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন “গোটা বিশ্ব আপনাকে চেনে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। মহান হওয়ার, দিকপাল হওয়ার মূলমন্ত্র কী, স্যার?”
আইনস্টাইন স্মিতহেসে একটিমাত্র শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন, “সময়।”
ভাল খারাপে সাদায় কালোয় মেশানো এই মানুষটির প্রতিভা ছিল প্রশ্নাতীত । কিন্তু আইনস্টাইনের সাথে স্মরণ করতে হবে তাঁর স্ত্রী মিলেভাকেও। যিনি চাইলে নিজেও বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হতে পারতেন কিন্তু হননি। যার নীরব স্যাক্রিফাইজে আইনস্টাইন নিশ্চিন্তে বিজ্ঞানীজীবন যাপন করতে পেরেছিলেন।
ইন্টারনেট থেকে ছবি ও তথ্য সংগ্রহে
মাহবুবুর রহমান খান
সম্পাদক – প্রকাশক
দৈনিক জনতার দেশ
ও জনতার দেশ মাল্টিমিডিয়া
এন্টারটেইনমেন্ট।