শাহ আলী তৌফিক রিপন, বিশেষ প্রতিনিধি:
কেন্দুয়া উপজেলার বলাই শিমুল ইউনিয়নের অন্তর্গত ছবিলা ও বলাই শিমুল গ্রামের মধ্যে ২ এপ্রিল সকাল ১০টায় এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে উভয় পক্ষের প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজি নদীর ওপর নির্মিতব্য একটি ব্রিজকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের কিশোরদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। এই ব্রিজে স্থানীয় বখাটেদের আড্ডা বসে এবং ট্যুরিস্টরাও এখানে সময় কাটান। অভিযোগ রয়েছে, নেশাখোর ও বখাটেরা প্রায়ই ব্রিজে বেড়াতে আসা মহিলাদের উত্যক্ত করে।
প্রায় দুই বছর আগে বলাই শিমুল গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে তুষার (১৫) ও ছবিলা গ্রামের কয়েকজনের মধ্যে এক ঘটনার জেরে বিবাদ সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৩০ মার্চ ছবিলা গ্রামের রিটনের ছেলে মারুফ, তৌফিকসহ কয়েকজনকে বলাই শিমুল গ্রামের তুষার ও তার সহযোগীরা মারধর করে।
পরদিন গ্রাম্য সালিশে বিষয়টি মীমাংসা করা হলেও ১ এপ্রিল তুষার ও তার সহযোগীরা ব্রিজের ওপর থেকে মারুফ (১৩) কে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে তার চাচা রশিদ (৩৫) ও চাচাতো ভাই মাজাহারুল (২৫) কে আক্রমণ করা হয়। মাজাহারুলের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত করে মারাত্মক আহত করা হয়।
সেদিন রাতেই বলাই শিমুল গ্রামের তোফাজ্জল, হুমায়ুন সহ আরো কয়েকজন ছবিলা গ্রামে আসেন ব্যাপারটা সুরাহা করার নিমিত্তে। ছবিলা গ্রামের সম্রাটের দোকানে ডাকা সেই দরবারে ছবিলার রশিদ (৩৫) ও তার গোষ্ঠীর লোকজন তোফাজ্জল সহ যারা বলাই শিমুল গ্রামের প্রতিনিধি হিসেবে দরবারে এসেছিলেন তাদের উপর চড়াও হয় এবং তাদেরকে মারধর সহ কয়েকটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে।
এ ঘটনার পরদিন সকাল ৯টায় দুই গ্রামের বাসিন্দারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষের সময় ছবিলা গ্রামের পূর্ব পাড়ার সাইদুর রহমান, হিরন ও আলীমউদ্দিনের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, বলাই শিমুল গ্রামের লোকজন প্রায় ৪-৫ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার, একটি মোটরসাইকেল, তিনটি বাইসাইকেল ও আটটি গরু লুট করে নিয়ে যায়।
সংঘর্ষে লিটন (৩৫) ও আকাশ (১২) গুরুতর আহত হন এবং তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচেষ্টায় প্রাণহানি ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও কেন্দুয়ার প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলালসহ কেন্দুয়া উপজেলার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা হারুনুর রশিদ ও এলাকাবাসী শান্তি বজায় রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।