পর্ব:২
ময়মনসিংহ ব্যুরো থেকে রাজু আহম্মেদ।
সাবেক বিডিআর সদস্য কে এই আশরাফুল হক (টিপু)। ২০০৯ সালে ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের পর চাকুরী হারায় আশরাফুল হক টিপু। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বহু। টিপুর নিজ বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার গরাডোবা ইউনিয়নের ভরাপাড়া গ্রামে। টিপু এইচএসসি পাশ করলেও নকলের দায়ে ধরা পড়ার পর ১৯৯৭ সালে ডিগ্রী পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সে বহিষ্কৃত হয় ফলে তার লেখাপড়ার এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটে।
গ্রামবাসীর তথ্য অনুযায়ী ছোট কাল থেকেই টিপুর মনোভাব ছিল যে কোন মূল্যে বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়া। তার পিতা হোসেন জামাল ছিলেন সামান্য বেতনভোগী মাদরাসার একজন কেরানি। ফলে সঙ্গত কারণেই টিপুদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। তার পিতার ছিলো চার ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বড় সংসার। সংসারে ছিলো টানাপোড়েন।
আশরাফুল হক টিপুর ভাগ্য খুলে যায় বিডিআরে চাকুরী হারানোর পর। গ্রামবাসীদের ধারণা মতে কোথা থেকে যেন আলাদীনের চেরাগ পেয়ে গেলো টিপু। জনমনে প্রশ্ন চাকুরী হারানো একজন বিডিআর সৈনিক টিপু কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বনে গেল কোন জাদু বলে। টিপু হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাওয়া নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
টিপুর পিতার জীর্ণশির্ন টিনের চালা বাড়িটি হঠাৎ করে সুবিশাল দোতলা বাড়িতে পরিনত হলো। রয়েছে কেন্দুয়ায় সাউথ পাড়ায় ৫ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ২ ইউনিটের ১ তলা ভবন যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক কোটি টাকার উপরে। জনতা বাজারে তিন তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে করা হয়েছে বাণিজ্যিক ভবন যার বর্তমান আনুমানিক মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা। ভরাপাড়া মাদরাসার পাশেই জমি কিনে মাটি ভরাট করে গড়ে তোলেছে কিন্ডার গার্টেন স্কুল সহ বেশ কিছু দোকান যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৭০ লক্ষ টাকা। স্কুল থেকে একটু সামনে এগুলেই মাদরাসার পিছনে পাকা রাস্তা ঘেষে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টি নন্দন আলিশান বাড়ি যার আনুমানিক বাজার মূল্য কোটি টাকা। এর পিছনেই রয়েছে বিশাল শেডে গড়ে উঠা মুরগীর খামার, এমন একটি খামার তৈরিতে ব্যয় আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকা। এই সব সম্পদের উল্টো পাশেই রয়েছে ফিসারী সহ একটি খামার বাড়ি, যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫০ লক্ষ টাকার উপরে। বিদ্যাবল্লভ গ্রামের বিদ্যাবল্লভ মৌজায় প্রায় ৫০ লক্ষ্য টাকার সম্পদ রয়েছে বলে ভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়। এছাড়াও ভরাপাড়া গ্রামে অনেক কৃষি জমির মালিক আশরাফুল হক টিপু। এসব সম্পত্তিতে টিপুর মালিকানা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে অন্যায় ও অনৈতিক ভাবে অর্থ উপার্জনের কারণে টিপু আজ গ্রামের কাউকে শান্তিতে বসবাস করতে দিচ্ছেনা। তার দাপটে গ্রামের সাধারণ নিরীহ জনগণ ও ভুক্তভোগীরা ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। সে বর্তমানে একটি বড় রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তথ্যমতে ভরা মৌজায় ৩৫৫ দাগে মরহুম আইনজীবী আব্দুল আজিজ তালুকদারের সন্তানদের মালীকানায় ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ভূমি ক্রয় করার সময় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মরহুম মুফতি ফজলুল হকের মালিকানাধীন ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভূমি সহ মোট ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ ভূমি অবৈধভাবে দলিল করে এবং মোট ১৫ শতাংশ ভূমি অবৈধ দখল নেয় আশরাফুল হক টিপু। দলিল নং ২০৮১। অভিযোগে জানাগেছে এই ১৫ শতাংশ ভূমিতে টিপু দ্রুত দোকানপাট ও কিন্ডার গার্টেন স্কুল নির্মাণ করে তার দখল নিশ্চিত করে। সেইসাথে ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ ভূমি অবৈধ উপায়ে নিজ নামে খারিজ করে নেয়। জানাগেছে উক্ত খারিজ বাতিল হয়ে বর্তমানে ১৯৪ খতিয়ান সংশোধিত অনুযায়ী ৩৫৫ দাগে টিপুর মালিকানা ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ভূমি সাব্যস্ত হলেও দখল রেখেছে ১৫ শতাংশ ভূমি। অথচ ভূমির প্রকৃত মালিক মুফতি ফজলুল হকের সন্তানেরা ভূমি উদ্ধার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেও আজ পর্যন্ত এর কোন সুরাহাই পায়নি।
টিপুর হঠাৎ বিশাল বিত্ত বৈভবের পিছনের রহস্যের জট খুলতে গ্রামবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুষ্ঠ তদন্তের দাবি করছে।
আশরাফুল হক টিপুর তার এসব অভিযোগের সত্যতার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে টিপু কিছু অভিযোগের আংশিক সত্যতা অপকটে স্বীকার করলেও পুরো অভিযোগটি তিনি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন প্রতিবেদককে।