শাহাদাত হোসেন রাজু:
“সংবাদ, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা”
যিনি চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে, সেগুলোকে তার লেখুনির মাধ্যমে প্রকাশ করাই সংবাদ। আর যিনি একাজটা করেন তিনি সাংবাদিক। আর একজন সাংবাদিকের পেশাগত দিকটাকে বলা হয সাংবাদিকতা।
একজন সংবাদদাতা বা সাংবাদিক বিভিন্ন স্থান, ক্ষেত্র, বিষয় ইত্যাদিকে ঘিরে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তথ্য সংগ্রহসহ সংবাদ কিংবা প্রতিবেদন তৈরি করে সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরণ করে থাকেন। পেশাজীবি হিসেবে একজন সাংবাদিকের কাজই হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠুতা বজায় রেখে সংবাদ পরিবেশ করা যা সাংবাদিকতার উৎকৃষ্ট উদাহরন। বর্তমানে বিভিন্ন বয়সের পুরুষ কিংবা নারী সাংবাদিকতাকে অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন পেশারূপে বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের লেখনিতে কতজন বস্তুনিষ্ঠুতা বজায় রাখতে পারছেন।
এক জরিপে দেখা যায় নরসিংদীর জেলায় প্রায় ৮ শত সাংবাদিক বা সংবাদকর্মী রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে তাদের মধ্যে লিখতে পারে কতজন। নরসিংদীতে এমন অনেক সাংবাদিক আছে যারা নিজের নামটা পর্যন্ত লিখতে জানে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারাও সাংবাদিক। সকাল ১০ টা থেকে ১১ঃ০০ টার মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলার মোড়ে দাড়ালে অনেক সাংবাদিককে দেখা যায়। কারো গলায় দেখা যাবে প্রেস লেখা ফিতা ঝুলানো, কারো কোমরে ঝুলতে দেখা যায আইডি কার্ড। আবার মাঝে মধ্যে কারো গলায় এক সাথে দুই তিনটি পত্রিকার আইডি কার্ড ঝুলতে দেখা যায়। এদের মধ্যে অধিকাংশই কেবলমাত্র নামকাওয়াস্তে সাংবাদিক। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলতে পারি ‘NEWS’ চারটি ইংরেজি বর্ণের এই শব্দটির অর্থ ওই সব সাংবাদিকদের অধিকাংশই বলতে পারবে না বা জানেনা। তবুও তারা সাংবাদিক। ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা অনলাইন পত্রিকা, বদৌলতে অথবা নিজেরাই ‘youtube’ চ্যানেল ‘ফেসবুক’ পেইজ খুলেই কেউ কেউ হয়ে যান সাংবাদিক। আজ থেকে ৩২ বছর আগে যখন হাতে কলম তুলে নিয়েছিলাম তখন দেখেছি সাংবাদিকতার কদর। কিন্তু বর্তমানে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য এই সমাজের দর্পন হিসেবে খ্যাত এই সম্মানিত পেশাটি হয়েছে কলঙ্কিত। তাইতো বর্তবানে কোন কোন স্থানে নিজেকে একজন সংবাদ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ হয়। আর এর জন্য আমি কেবলমাত্র সাংবাদিক নামধারী কয়েকজন চাটুকারকে দায়ী করবো। যারা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তির কিংবা কোন রাজনৈতিক নেতা অথবা কোন ধনাট্য ব্যক্তির তোষামোদি করতে গিয়ে সাংবাদিকতাকে করছে কলঙ্কিত।
যা আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বদৌলতে আমরা দেখতে পাই। সাংবাদিক নামধারী গুটি কয়েক চাটুকার “সাংবাদিকতা”র নাম ভাঙিয়ে এর সাথে জড়িত থেকে এই পেশাকে করছেন কলঙ্কিত।তারা চাটুকারিতাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে প্রশাসনের কোন কর্তা ব্যক্তি বা কোন রাজনৈতিক নেতা যা নন তাদের নামের পূর্বে এমন কিছু বিশেষণ জুড়ে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ‘নান্দনিক’ এই শব্দটা কম ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ইতিপূর্বে নরসিংদীতে যারাই জেলা প্রশাসক হয়ে আসতেন তাদের প্রত্যেকের নামের পূর্বে নান্দনিক শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবহার করা হচ্ছে মানবিক শব্দটি। যেমন মানবিক জেলা প্রশাসক, মানবিক পুলিশ সুপার, মানবিক সিভিল সার্জন ইত্যাদি ইত্যাদি।
চাটুকারিতার এখানেই শেষ নয়। ওই সকল সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তিরা চাটুকারাতা করতে গিয়ে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ঈদ শুভেচ্ছা, নববর্ষের শুভেচ্ছাসহ বিভিন্ন দিবসগুলোর শুভেচ্ছা বার্তাগুলো তাদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করছেন। এর নাম কি সাংবাদিকতা?
এবারের ঈদেও এমন অনেক পোস্ট কার্ড জেলার সাংবাদিক নামধারী (আমার ভাষায়) ব্যক্তির ফেসবুক আইডিতে শোভা পেতে দেখা গেছে। যা আদৌ কাম্য নয়।
তাই আমি ওইসকল ভাইদের আপনি যদি নিজেকে একজন সাংবাদিক মনে করেন তবে আপনি আপনার নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন,-
আপনার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ওইসকল শুভেচ্ছা বার্তার জন্য হয়তো যত সামান্য আর্থিক সুবিদা আপনি পেয়েছেন। কিন্তু আপনার এই কাজে দেশ ও দেশের সাধারণ মানুষের কাছে আপনার পেশা হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ, করেছে কলঙ্কিত। তাই বলবো আপনি যদি নিজেকে একজন প্রকৃত সাংবাদিক ভাবতে চান তবে ভবিষ্য্যতে এ কাজ থেকে বিরত থাকবেন এমনটাই প্রত্যাশা থাকবে।
**আমার এই কথাগুলো কাউকে কটাক্ষ করে নয় বরং আপনার যে চোখ বন্ধ ছিল সেই চোখের দৃষ্টি খুলে দিতে, আপনার বিবেককে জাগ্রত করতে। লেখাটা পড়ে কেউ ভুল ধারণা পোষণ করবেন না।
প্রতিবেদকঃ একজন প্রফেশনাল সাংবাদিক।