নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বলাই শিমুল ইউনিয়নের কুমড়ুরা গ্রাম বর্তমানে এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি। কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে উঠে এসেছে রঞ্জন ভট্টাচার্য, যিনি নিজেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার বলে দাবি করছেন। তবে অতীতের কিছু ঘটনা এবং অভিযোগের ভিত্তিতে ভিন্ন চিত্রও দেখা যাচ্ছে।
৫ই আগস্টের আগে রঞ্জন ভট্টাচার্য কুমড়ুরা গ্রামে ছিলেন এক আতঙ্কের প্রতীক। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় তিনি অনেক মানুষকে মামলা-মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে হয়রানি করেছেন। বিভিন্ন অভিযোগে বলা হয়, মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেছেন তিনি, যদিও সরাসরি কেউ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস পায়নি।
৫ই আগস্টের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। যাদের উপর এক সময় রঞ্জন মামলা চাপিয়ে হয়রানি করতেন, তারাই তার বাড়ি ও দোকানে হামলা চালায়। এই ঘটনায় রঞ্জন তার অবস্থান পরিবর্তন করে নিজেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন নিরীহ সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করেন। সংবাদকর্মীদের কাছে এসে তিনি অভিযোগ করেন যে, তাকে ভারত চলে যেতে বলা হয়েছে এবং যদি না যান তবে তাকে বড় অঙ্কের চাঁদা দিতে হবে। তবে এর পক্ষে গ্রামবাসীর কাছ থেকে কোন সমর্থন পাওয়া যায়নি।
আমরা, সাংবাদিকরা, যখন কুমড়ুরা বাজারে উপস্থিত হই, তখন এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা চোখে পড়ে। রঞ্জনের মা স্মৃতি রানী সরকারের কাছে তাদের আত্মীয় আব্দুল খালেকের ছেলে রাব্বি ১,৫০,০০০ টাকা পাওনা দাবি করেন। স্মৃতি রানী সরকার এ দাবি অস্বীকার করেন এবং আমাদেরকে রঞ্জনের ভাঙা দোকান দেখাতে নিয়ে গেলে রাব্বি বাধা সৃষ্টি করে। পুরো ঘটনাটি ভিডিও ধারণ করা হয়, যা পরবর্তীতে ফেসবুকে প্রকাশিত হলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, রঞ্জন তার দেনাদারদের চাপেই ৫ই আগস্টের পর থেকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের মতে, তার বিরুদ্ধে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি, বরং তার অপকর্মের প্রতিশোধ হিসেবেই এই হামলা সংঘটিত হয়েছে। গ্রামের অনেকেই অতীতে রঞ্জনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন, ফলে তার বর্তমান অভিযোগকে তারা অপপ্রচার হিসেবে দেখছেন।
রঞ্জন ভট্টাচার্যের সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন তদন্তে নেমেছে। কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, এটি একটি পরিকল্পিত সংখ্যালঘু নির্যাতন।
রঞ্জন ভট্টাচার্য ও তার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি সামনে এলেও বাস্তবিক পরিস্থিতি ভিন্ন। তাদের ওপর হামলা যে ঘটেছে, তা অস্বীকার করা যায় না। তবে স্থানীয়দের বক্তব্য এবং প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এটি একটি দেনা-পাওনার জের ধরে সংঘটিত প্রতিশোধমূলক হামলা। প্রশাসনিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পাবে বলে আশা করা যায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অন্যায় প্রচেষ্টা নিন্দনীয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে প্রত্যাশা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. মাহবুবুর রহমান খান, নির্বাহী সম্পাদক: মো. মিজানুর রহমান, বার্তা সম্পাদক: হাসান আইয়ুব বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়: ২নং শহীদ তাজউদ্দিন রোড, মগবাজার মোড় রাজ্জাক প্লাজা (৩য় তলা), ঢাকা -১২১৭।
মোবাইল: 01768387638 (সম্পাদক-প্রকাশক), 01716965924 (নির্বাহী সম্পাদক), 01727457562 (বার্তা সম্পাদক)।
আঞ্চলিক কার্যালয়: হাজেরা টাওয়ার (৩য় তলা), রেলওয়ে স্টেশন রোড (খালপাড়), নরসিংদী।
ই-মেইল: aiobhasanar@gmail.com
Copyright © 2025 Daily Janotar Desh. All rights reserved.