শাহ আলী তৌফিক রিপন
বিশেষ প্রতিনিধি
সম্প্রতি কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম নিয়ে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য তাবলিগ জামাতের কার্যক্রমকে ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত করা। বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসাগুলোর উপর প্রশাসনের হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান, এবং ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে আলেম ও তৌহিদি জনতার ওপর নির্যাতনের বিচার দাবি করা হয়েছে। এছাড়া, ২০১৮ সালের টঙ্গীর ময়দানে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও তাবলিগের সাথিদের ওপর হামলার বিচার এবং স্বঘোষিত আমির মাওলানা সাদের বাংলাদেশে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানান হয়েছে।
এসব দাবির পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পটভূমি, যা তাবলিগ জামাতের ভেতরকার বিভক্তির কারণে আরও গভীর হয়েছে। তাবলিগ জামাতের মূল নীতি ও দাওয়াতের কার্যক্রম যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি তাবলিগ জামাতের ভেতরে বিভাজন এবং একপক্ষের বিরুদ্ধে অন্যপক্ষের অভিযোগ এই আন্দোলনকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। যা শান্তিপূর্ণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগের সৃষ্টি করছে।
তাবলিগ জামাতের দুই অংশের মধ্যে যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে, তা ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে। অথচ এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত করা। আমরা বিশ্বাস করি, তাবলিগ জামাতের যেকোনো পক্ষকে নিজেদের মতামত পেশ করার অধিকার আছে, কিন্তু সেটি সংঘাতে রূপ নেওয়া উচিত নয়। একে অপরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর পরিবর্তে, আলোচনা ও সমঝোতার পথ খোলা রাখা একান্ত জরুরি।
বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো রক্তপাত দেখতে প্রস্তুত নয়। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে যে বেদনাদায়ক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলাম, তার পুনরাবৃত্তি আমরা কখনোই চাই না। তাবলিগ জামাতের মধ্যে যে বিশ্বাসের ফাটল তৈরি হয়েছে, তা মেরামত করতে হলে ধৈর্য, বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক সম্মানের প্রয়োজন। উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানাচ্ছি, সংঘাতের পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে এগিয়ে যান।
তাবলিগ জামাতের ঐতিহ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে ইসলামের পথে আহ্বান করা। এই মহৎ কাজকে কোনোভাবেই বিভক্তির বা সংঘাতের রূপ দেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশকে শান্তির পথে রাখতে হলে, ধর্মীয় নেতৃত্বের দায়িত্ব হলো সমাধান খুঁজে বের করা, যেখানে কোন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
আমরা আশা করি, আলেম-ওলামাদের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম পুনরায় শান্তিপূর্ণ ও সংঘাতমুক্ত হবে। বাংলাদেশে ইসলামের মর্মবাণী প্রচারের জন্য তাবলিগ জামাতের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এর ভেতরে সৃষ্টি হওয়া মতপার্থক্যকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা আমাদের সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব।