প্রখ্যাত সাংবাদিক মাজহারুল পারভেজ এর ওয়াল থেকে
( সংগৃহিত)।
মাজহারুল পারভেজ এর ভাষ্যমতে:
তখন আওয়ামীলীগের মুখপাত্র মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনিসহ আওয়ামীলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার শতাধিক ফোন এসেছিল কামরুজ্জামানের মোবাইলে। ফোনে সবার একটা-ই নির্দেশনা। খায়রুল কবীর খোকনকে যেন এক নম্বর আসামী করে মামলা রুজু করা হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমদে রাজুকে যেন কোনভাবেই এ মামলায় জড়ানো না হয়। উপর মহলের এমন নির্দেশনায় নিহতের পরিবার একেবারে হতভম্ব হয়ে পড়ে।
আওয়ামী পন্থী স্থানীয় কিছু আইনজীবীও নিহত লোকমান হোসেনের ছোট ভাই কামরুজ্জামান কামরুলকে এমন পরামর্শ দিতে শুরু করলেন। সাথে বিএনপির কিছু অতি উৎসাহী নেতাও এ অভিযানে যোগ দেয়।
সেদিন আমি ছাড়া এ প্রস্তাবের তিব্র প্রতিবাদ করার কোন মানুষ খোঁজে পাইনি। তবে সাহেপ্রতাবের ফারুক সরকার ভাই আমার সাথে কিছুটা একমত পোষণ করেছিলেন। কামরুলকে বলেছিলাম, খায়রুল কবীর খোকন কোন ভাবেই এ খুনের সাথে জড়িত থাকতে পারে না। তাদের দু-জনের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক ছিল। সেদিন কারো কথা আমলে নেয়নি কামরুল। আমার কথা বিশ্বাস করেছিল মনে প্রাণে। আমারও বিশ্বাস ছিল খায়রুল কবীর খোকন কোন হত্যার রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতে পারে না।
আমার যুক্তির সাথে না পেরে আওয়ামীপন্থী মুছ ওয়ালা এক আইনজীবী বললো আমি নাকি খোকনের এজেন্ড।
এমন একতরফা মন্তব্যেও কামরুল ভালোভাবে নেয়নি সেদিন। ধমক দিয়ে ষড়যন্ত্রকারী এই আইনজীবীর
মুখ বন্ধ করে দিল কামরুল। তারপরও আমি তুষ্ট হতে পারিনি।
আমার মনে হয়েছিল প্রকৃত সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চলছে এখানে। রোমহষর্ক খুনের বিচারের চেয়ে যার যার পারপাস সার্ভ করার চেষ্টা চলছে। পরিবেশের সাথে নিজেকে আর খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। পরে চুপ করে বাসায় ফিরে আসলাম।
আছরের নামাজের পরে কামরুল আমাকে ফোন দিয়ে তাঁর বাসায় যেতে অনুরোধ করলো। আমি অপারগতা প্রকাশ করলাম। কিন্তু সে নাছোরবান্দা। কে কি বললো এই মুহূর্তে এসব কানে না দেয়ার অনুরোধ করলো। শেষপর্যন্ত বাসায় গেলাম।
আমি যাওয়া মাত্রই থানায় রওনা দিল মামলা রুজু করার জন্য। কামরুল আর আমি এক সাথে। আমাদের সাথে শোকাহত শত শত লোকমান অনুসারী। এরইমধ্যে বার বার ফোন আসছে কামরুলের মোবাইলে। কামরুল ফোন রিসিভ করে শুধু অপর প্রান্তের কথা শুনে। হা হু কিছু না বলেই রেখে দেয়।
ইতোমধ্যে আমরা সদর থানার তৎকালীন ওসি আনোয়ার হোসেন এর দরোজার সামনে পৌছে যাই।এবার আবার হানিফের ফোন আসলো। রিসিভ করে আমার কানে মোবাইল দিল কামরুল। অপরপ্রান্ত থেকে হানিফ বলছেন খোকনকে ১ নম্বর আসামী করে মামলা করো কামরুল। কোন ভাবেই রাজু ভাইকে আসামী করা যাবে না। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। যদি এর কোন ব্যত্যয় ঘটে তাহলে আপার (শেখ হাছিনা) কোন সহোযোগিতা পাবা না। দল থেকে কেউ এগিয়ে আসবে না। একথা এখনো বার বার কানে ভাঁজে। তবে খোকন ভাইকে এ মামলায় আসামী না করলেও পুলিশ তাকে আটক করে জেলে পাঠায়। গত এক যোগেও আওয়ামীলীগ এই হত্যা কান্ডের বিচার করলো না।
এই হত্যাকান্ডসহ নরসিংদীবাসী সকল হত্যাকান্ডের বিচার চায়।