মোঃ সুমন হোসেন,মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
মুন্সীগঞ্জে এ সময় এলে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে জমজমাট হয়ে উঠে মানুষের শ্রম বেচাকেনার হাট।এর মধ্যে রাজধানীর সন্নিকটে অবস্থিত মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের খ্যাতি আলুর উপজেলা হিসেবে।
উপজেলার বিস্তীর্ণ জমিতে কার্তিক মাসের শুরু থেকে শুরু হয় আলুর আবাদ।বছরের কয়েক মাস ধরে আলু রোপণ ও উত্তোলনে ব্যাপক কর্মযজ্ঞের সৃষ্টি হয় ১৪টি ইউনিয়নে।এ জন্য মানুষের শ্রম বিক্রির হাট বসে বিভিন্ন বাজার ও বাসস্ট্যান্ডে। এসব হাটে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত দর কষাকষি করে কেনাবেচা হয় মানুষের শ্রম।হাটগুলোতে কেউ বিক্রি হন সাত দিনের জন্য,কেউবা এক মাসের জন্য।অনেকে আরও বেশি দিনের জন্যও বিক্রি হন।
সিরাজদীখানে আলু বপন, পরিচর্যা,উত্তোলন থেকে হিমাগারে পৌঁছানো পর্যন্ত শ্রমিকের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।সেই চাহিদা মেটাতে দেশের উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম,রংপুর,পাবনা, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ ছুটে আসেন জীবিকার তাগিদে। বুধবার(১৬ অক্টোবর) সকালে কেয়াইন ইউনিয়নের নিমতলায় দেখা যায়,শ্রম বিক্রির হাটে শত শত পুরুষের জটলা।ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৬টা।শ্রমিক বা দিনমজুররা কাজের আশায় সেখানে এসেছেন।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থেকে আসা তাইবুর হোসেন (৩৫) বলেন,বর্তমানে তাদের গ্রামের বাড়িতে কোনো কাজকর্ম নেই। তাই কাজের সন্ধানে একই এলাকার পাঁচজনের সঙ্গে এই হাটে এসেছেন।এক আলুচাষির সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।চাষি তাইবুর ও তাঁর সঙ্গীদের এক মাসের জন্য নিতে চান।এ জন্য দিনপ্রতি ৫০০ টাকা করে দিতে রাজি হয়েছেন।কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে আসা সুজন মিয়া (৪০) বলেন,কৃষিকাজই আমাদের আয়ের একমাত্র মাধ্যম।এই সময়টাতে আমাদের ওখানে কোনো কাজ থাকে না।
তাই সিরাজদীখানে এসেছি।কয়েকজনের সঙ্গে সুজনের দর কষাকষি চলছে। দু’পক্ষের হিসাব মিললেই কাজে যাবেন তিনি।সামান্য সময়ের জন্য শ্রম বিক্রির এই হাট নিমতলা ছাড়াও বসে উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের ইছাপুরা চৌরাস্তা, বালুচর বাজারসহ আরও কয়েকটি জায়গায়।আলু তোলা থেকে অন্যান্য ফসলের কাজেও এই মৌসুমি শ্রমিকদের দরকার স্থানীয় চাষিদের।পারিশ্রমিকে মিললেই শ্রমিকরা ছোটেন ফসলের মাঠে।ইমামগঞ্জ এলাকার আলুচাষি মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিনিধির।তিনি জমিতে আলু রোপণের জন্য উত্তরবঙ্গের শ্রমিক নিয়োগ করেছেন।তিনি বলেন,আমাদের এলাকায় শ্রমিক সংকট,তাই নিমতলায় এসেছি।আলুর জমি প্রস্তুত করার জন্য ১০ জন শ্রমিক নিয়েছি।থাকা ও খাওয়াসহ দিনে প্রতিজনকে ৫০০ টাকা দিতে হবে।ইছাপুরার আলুচাষি ইসমাইল মিয়া বলেন,একজন শ্রমিক দিনে ৪০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান।ইছাপুরা চৌরাস্তা থেকে ৬ জন শ্রমিককে নিয়েছেন।তাদের আলু বপনের কাজে লাগাবেন থাকা- খাওয়াসহ দিনপ্রতি ৫০০ টাকা করে প্রত্যেককে দিতে হবে।
সিরাজদীখান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, উপজেলার বিভিন্ন হাটে দেশের নানা এলাকার শ্রমিক প্রতিদিন কাজের সন্ধানে আসেন।গত বছর সিরাজদীখানে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল।ওই বছর আলুর ভালো দাম মিলেছিল।চলতি বছর আলু আবাদ বাড়তে পারে।