মাহবুবুর রহমান খান:২৪ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নরসিংদী -৫ রায়পুরা আসন।নরসিংদির ৫টি আসনের মধ্যে এই আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। মাত্র একবার সংসদ সদস্যের চেয়ার টি ছিল জাতীয় পার্টির ও একবার’ব ছিল বিএনপির হাতে। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মাইনুদ্দিন ভূঁইয়া এমপি নির্বাচিত হন।পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীও হন। ১৯৯১সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত আব্দুল আলী মৃধা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন । এরপর নির্বাচিত সরকার হাসিনা সরকারের পতনের পর এ আসনে এবার সক্রিয় হয়েছে বিএনপি । আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় গণসংযোগ করছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা রায়পুরার ২৪টি ইউনিয়নে গণসংযোগ ও ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে তারা শুভেচ্ছা জানিয়ে ভোটারদের দোয়া চাচ্ছেন। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে আইন শৃংখলা পরিস্হিতির উন্নয়ন, চরাঞ্চলে মেঘনা ব্রিজ নির্মাণ ও সড়ক ব্যবস্থা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রত্যেকেই। এর মধ্যে ব্যতিক্রম জামায়াতে ইসলাম। নরসিংদীর সব পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের নিয়ে তারা ভার্চুয়ালি আসন ভিত্তিক প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। জামায়াতের নরসিংদী জেলা আমির মাওলানা মো: মুসলিম উদ্দিন জেলা জামায়াতের মজলিসের শূরা সদস্য ও রায়পুরা সদর থানা আমির মাওলানা জাহাঙ্গীর আলমকে প্রথমে নরসিংদী – ৫ আসনে তাদের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা করলে তিনি দলীয় সমাবেশ ও গণসংযোগ এর পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রার্থী ভোটারদের জানান দেন। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে তার নাম স্থগিত করা হয়। এ প্রসঙ্গে মাওলানা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম গণ মাধ্যম কে জানান, দল থেকে তাকে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য নির্ধারণ করার পর গত ২২ মে আবার তার নাম স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচনে কার্যক্রম সাময়িকের জন্য স্থগিত রেখেছেন। তবে দল থেকে অন্য কাউকে মনোনীত করা হলে তার পক্ষেই মাঠে কাজ করার কথা জানান তিনি। আরেক প্রার্থী জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও দলের সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য জামাল আহমেদ চৌধুরী। তিনি ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী রাজিউদ্দিন রাজুর নিকট পরাজিত হন। এখনো এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে সেই নির্বাচনে জামাল চৌধুরী বিজয়ী হলেও তাকে কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করা হয়েছিল। বিগত সময় তিনি দলের জন্য সব সময় কাজ করেছেন। দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হতে পারলে তিনি রায়পুরার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করবেন। উন্নয়নের আগাম প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল। তিনি বলেন রাজপথে আগেও ছিলাম এখনো আছি পালিয়ে যাওয়ার লোক আমি না। দেশের জন্য কাজ করেছি। তার দাবি আওয়ামী শাসনামলে দলের কারা নির্যাতিত নেতা কর্মীদের পাশে থেকে অর্থ ও শ্রম দিয়ে কাজ করেছেন। তাই তিনি ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আরেক প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক কারা নির্যাতিত সংগ্রামী নেতা,জিয়ার আদর্শের সৈনিক,ঢাকা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক ও রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম.এন জামান। যিনি আওয়ামী দু:শাসনের আমলে ১৭ বছর রাজপথে থেকে দলীয় প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জুলুম নির্যাতনের
শিকার হয়ে অসংখ্যবার কারাবরণ করেছেন।শত নির্যাতন
নিপীড়নের মাঝে ও তিনি শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। রায়পুরাতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যার রয়েছে সর্বোচ্চ সময়ের কারাবরণ নিপীড়ন নির্যাতনের রেকর্ড। রাজনৈতিক ভাবে
তার উপরই বেশি চালানো হয়েছে পলিটিক্যাল স্টিম রুলার। আওয়ামী সরকারের আমলে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই গোপনে দফারফা করে এলাকায় নিয়মিত এসে নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ করেছেন মুনাফা লুটেছেন থেকেছেন রাজনৈতিক মামলা হামলা থেকে নিরাপদে।কিন্ত এম.এন
জামান তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। যিনি আপোসের রাজনীতি
করেন নি বলেই দীর্ঘ ১৭ বছর মামলা হামলার ভয়ে
আসতে পারেন নি নিজ নির্বাচনি এলাকায়। এম.এন
জামান ছিলেন আপোসহীন। একমাত্র তিনিই ছিলেন
প্রতি পক্ষ রাজনীতির সিংহ পুরুষ।

তিনি রায়পুরায় নিয়মিত গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। তার বিশ্বাস অতীতে বিএনপির সব ধরনের আন্দোলন সংগ্রামে তিনি অগ্রভাগে ছিলেন এখনো আছেন। তাই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তিনি শতভাগ আশাবাদি। বিএনপি থেকে অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন জেলা বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাদল, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন শ্যামল, মাঈন উদ্দিন ভুঁইয়ার সুযোগ্য সন্তান,তারুণ্যের প্রতীক
পরিচ্ছন্ন ক্লীন ইমেজের প্রার্থী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল আমিন ভূইয়া রুহেল,আরেক কারা
নির্যাতিত যুব নেতা, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস মহসিন হোসাইন বিদ্যুত। এখানে উল্লেখ্য যে, জাহাঙ্গীর আলম বাদল ২০১৮ সাল বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তার নামে এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচিত হতে পারলে রায়পুরা নদী ভাঙ্গন রোধ, বেরিবাঁধ নির্মাণ এলাকায় গ্যাস সংযোগ, শিক্ষা ব্যবস্থার সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করবেন।
রায়পুরার পশ্চিমাঞ্চলে তাঁর একটি বিশাল ভোট ব্যাংক
রয়েছে। তিনিও একজন সৎ, পরিচ্ছন্ন, ক্লীন ইমেজের মানুষ। রায়পুরা থেকে কে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন তা
নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।বিএনপি’র পাশাপাশি নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক গণসংযোগ ও পথসভা চালিয়ে যাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জাতীয় সংস্কৃতি সংগঠন কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর নির্বাহী পরিচালক মাওলানা বদরুজ্জামান। দলীয় সমর্থন পেতে তিনি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে গণসংযোগ করেছেন। মানুষের কাছে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। রায়পুরা আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি এন সিপি থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ ফয়সাল। এখন পর্যন্ত দলীয় কোন কর্মসূচি কিংবা
এজেণ্ডা নিয়ে তাকে কোন এলাকায় গণসংযোগ কিংবা
পথ সভা করতে দেখা যায়নি। তবে এলাকাতে গুঞ্জন
শোনা যাচ্ছে জামাল চৌধুরী, এম.এম জামান,জাহাঙ্গীর
আলম বাদল,রফিকুল আমিন রুহেল এর গ্রুপ থেকে
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে
যে কেউ মনোনয়ন পেতে পারেন। এখানে ইঞ্জিনিয়ার
আশরাফুল উদ্দিন বকুলের মনোনয়ন ঠেকাতে তারা
ঐক্যবদ্ধ বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে
তৃণমূল বিএনপির অসংখ্য নেতা কর্মি।
তাদের কথা বার্তার ধরণ দেখে অনুমান করা হচ্ছে এবার বিএনপির দুর্দিনে যারা জিবন বাজি রেখে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থেকে জেল জুলুমের
শিকার হয়েছেন তাদের বঞ্চিত করে যদি কোন টাকা
ওয়ালা হাইব্রিড নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে
রায়পুরার মাটিতে প্রতিরোধ আন্দোলনের পাশাপাশি
অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটবে। যে পরিস্হিতি সামাল
দিতে জেলা পুলিশ প্রশাসন কে চরম মূল্য দিতে হবে।
বিশেষ করে রায়পুরার ভোট ব্যাংক বলে খ্যাত
চরাঞ্চল কে ঘিরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
প্রতিবেদক
সম্পাদক- প্রকাশক
দৈনিক জনতার দেশ
ও জনতার দেশ টিভি।
তথ্যসূত্র: ১।আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের রেফারেন্স।
২।এলাকার জনসাধারণের মতামত।
ছবি ক্রেডিট: দৈনিক আমার দেশ।