মো: মাহবুবুর রহমান খান।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (OHCHR) তথ্য-উদ্ধার প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিএনপি (BNP) ২০২৪ সালের বিক্ষোভে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও সংগঠিত ভূমিকা পালন করেছে, যেখানে জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) তুলনামূলকভাবে সীমিত ও বিচ্ছিন্নভাবে জড়িত ছিল।
১. বিএনপির ভূমিকা – অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সংগঠিত:
বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন দেয় এবং জাতীয় পর্যায়ে বিক্ষোভের ডাক দেয়।
২৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখে বিএনপি “জাতীয় ঐক্যের” আহ্বান জানায় এবং সকল গণতান্ত্রিক দল, সামাজিক সংগঠন ও কর্মীদের শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে একত্রিত হতে বলে।
৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে “মার্চ অন ঢাকা” কর্মসূচিতে বিএনপির উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল, যা সরাসরি শেখ হাসিনার পদত্যাগের পথ প্রশস্ত করে।
সরকার বিশেষভাবে বিএনপি’র নেতা ও কর্মীদের টার্গেট করে দমন-পীড়ন চালায়, যার মধ্যে গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং রাজনৈতিক দমননীতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
✅ ওএইচসিএইচআর-এর মূল্যায়ন অনুযায়ী:
✳️ বিএনপি প্রতিবাদকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তর করে এবং সরকারের পতনের দাবিকে জোরালো করে।
✳️ বিএনপি আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিল না (ছাত্র আন্দোলন প্রধান ভূমিকা রেখেছে), তবে এটি প্রতিবাদকে জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয় এবং সরকারবিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে।
২. জামায়াতে ইসলামী’র ভূমিকা: তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ ও বিচ্ছিন্ন –
জামায়াতে ইসলামী বিক্ষোভকে সমর্থন জানায় এবং তাদের কর্মীদের অংশ নিতে উৎসাহিত করে, তবে তারা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল না।
কিছু জামায়াত সদস্য সহিংসতায় জড়িত হয়, বিশেষত আওয়ামী লীগের কর্মী ও পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আক্রমণে।
তবে ওএইচসিএইচআর-এর তদন্তে প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বিক্ষোভ সংগঠিত করেছে বা সহিংসতা পরিচালনা করেছে।
৩০ জুলাই, ২০২৪ তারিখে সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং তাদের সদস্যদের ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তার করে, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
✅ ওএইচসিএইচআর-এর মূল্যায়ন অনুযায়ী:
✳️ জামায়াতের ভূমিকা গৌণ ছিল, প্রধানত বিক্ষিপ্ত সদস্যদের অংশগ্রহণ ও স্থানীয় পর্যায়ের কিছু সহিংসতার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
✳️ জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রতিবাদের মূল চালক ছিল না।
৩. তাহলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কে পালন করেছে:
✴️ বিএনপি ছিল এই আন্দোলনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, যারা আন্দোলনকে জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয় এবং এটিকে একটি সরকার পতনের দাবিতে রূপান্তর করে।
✴️ জামায়াতের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে সীমিত ছিল, এবং তাদের নেতৃত্ব আন্দোলনকে সংগঠিত করেনি।
✴️ সরকার বিএনপিকে প্রধান রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখেছিল, যার কারণে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে বড় আকারে দমন-পীড়ন চালায়।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত (প্রতিবেদন অনুযায়ী)
✅ বিএনপি ২০২৪ সালের বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক সংকটে মূল ভূমিকা পালন করেছে এবং সরকার পতনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
🚫 জামায়াত আন্দোলনে জড়িত থাকলেও, এটি ছিল একটি গৌণ শক্তি এবং এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বড় কোনো সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা নেয়নি।
লেখক: সম্পাদক- প্রকাশক,দৈনিক জনতার দেশ।
তথ্যসূত্র:বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা,আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক
বিশ্লেষক এর কলাম ও সমকালীন রাজনৈতিক টকশো।