এ জেড আমিনুজ্জামান রিপন :
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর গ্রামে পুলিশের গাড়িতে আগুন, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এনসিপির গোপালগঞ্জ সফর ও সমাবেশকে ঘিরে আজ সকাল থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
আজ (১৬ জুলাই) বুধবার সকাল ৯টার দিকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।এনসিপি ঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সকালে উলপুর এলাকায় ছাত্রলীগের ৩০থেকে ৪০ জন মানুষ একত্রিত হয়ে পুলিশের গাড়ির ওপর হামলা-ভাংচুর করে। এতে একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এরপর তারা আগুন দিয়ে পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সাথে গ্রামবাসীর ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গ্রামবাসীর অভিযোগ পুলিশ গ্রামের সাধারন মানুষের উপর গুলি চালিয়েছে। এরপর গোপালগঞ্জ জেলার প্রবেশপথে টেকেরহাট সড়কের নানা জায়গায় রাস্তার মাঝখানে গাছ ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ‘জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ সদরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি বহরে হামলা, ভাঙচুর করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ও সমর্থকেরা।
বুধবার (১৬ জুলাই) ১২টার পর সদর উপজেলার কংশুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান। তিনি জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে পদযাত্রা ও পথসভা করার কথা রয়েছে। তাদের কর্মসূচি বানচালের জন্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা প্রথমে পুলিশের ওপর হামলা করে, পরে আমার গাড়ি বহরে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মির মো. সাজেদুর রহমান বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির মাসজুড়ে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে বুধবার গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে পদযাত্রার কথা রয়েছে তাদের। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের আগমনের কথা রয়েছে। তাদের পদযাত্রা বানচালের জন্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর এলাকায় ইউএনওর গাড়ি বহরে হামলা ও ভাঙচুর করেছে।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জে পদযাত্রা শুরু করে এনসিপি নেতা-কর্মীরা। পহেলা জুলাই থেকে দেশ গতিতে জুলাই পদযাত্রা’কর্মসূচি পালন শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগেই গোপালগঞ্জে যাওয়ার ঘোষণা দেয় এনসিপি।
এই বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে এই ঘোষণা দেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। দলের তিনি লিখেছেন, ১৬ জুলাই…মার্চ টু গোপালগঞ্জ’।
ওই পোস্টের কমেন্ট সেকশনে তিনি আরও লেখেন আমরা আসছি! জুলাই পদযাত্রা, গোপালগঞ্জ জেলা শহরে, সকাল ১১ টার।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশস্থলে যোগদানের আগেই স্থানীয় এনসিপির নেতাদের উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্যে উত্তেজিত এলাকাবাসী হামলা করে সমাবেশ স্থল গুড়িয়ে দেয়।
সেনা বাহিনী ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় হামলার মুখে শিকার হয় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বহনকারী গাড়িবহর।
শহরের সমাবেশস্থল থেকে বের হওয়ার পথেই কেন্দ্রীয় নেতাদের বহনকারী গাড়িবহরের ওপর ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।
পুলিশ ও র্যা বের পাহারায় এনসিপির নেতাদের শহর থেকে বাইরে বের করার চেষ্টা করা হলেও ব্যাপক হামলার মুখে তাদের আবার শহরে ফিরিয়ে আনা হয়। শহরের পুরাতন লঞ্চ ঘাটের অদূরে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। কিছুক্ষণ পরে সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌছালে ব্যবসায়ী ও সাধারন মানুষের সাথে তাদের ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী গুলি ছেঁাড়ে । এতে গুলিবিদ্ধ ২০ জন, প্রাথমিক পর্যায়ে সদর হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী গুলিতে নিহত ৩জন জানা যায়। নিহতরা হলেন, রমজান কাজী, থানাপাড়া, গোপালগঞ্জ, দীপ্ত সাহা উদয়ন রোড়ের সন্তোষ সাহার ছেলে, সোহেল সিকদার টুঙ্গিপাড়া গোপালগঞ্জ।
গোপালগঞ্জের এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনার পর ১৪৪ ধারা জারি করেছেন জেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের ঘোষণা মোতাবেক ১৬ই জুলাই রাত ৮টা থেকে ১৭ই জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্ফু চলবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এনসিপির সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একদল ব্যক্তি লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালায়। তারা চারদিক থেকে এনসিপির নেতা-কর্মী ও পুলিশের গাড়ি আটকে দেয়।
একপর্যায়ে এনসিপি নেতাদের গাড়ি বহর ঘুরিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়ি থেকে নামিয়ে এনসিপি নেতাদের পুলিশ সুপারের দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এনসিপির নেতা-কর্মীরা অন্য দিক দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির নেতারা গোপালগঞ্জে পূর্ব ঘোষিত মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে দলের কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে একে একে বক্তব্য দেন।
এসময় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, গোপালগঞ্জকে সাথে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, “রাস্তা আটকে, হামলা করে গোপালগঞ্জের সাহসী জনতাকে আটকে রাখা সম্ভব না। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
তিনি আরো বলেন, “মুজিববাদি সংবিধান নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রধান বাঁধা। মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচনা করতে হবে। আজকে যে বাধা দেওয়া হয়েছে, দ্বিগুণ গতিতে এর জবাব দেওয়া হবে।