কেন্দুয়ায় সেচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন: শতাধিক কাঠা জমি অনাবাদি, কৃষকদে আর্থিক ক্ষতির আশংকা।
শাহ আলী তৌফিক রিপন
বিশেষ প্রতিনিধি :
কেন্দুয়া উপজেলার ছিলিমপুর গ্রামে সেচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে প্রায় দুই শতাধিক কাঠা জমি অনাবাদি রয়ে গেছে। সেচ সুবিধার অভাবে স্থানীয় কৃষকরা এ বছর তাদের জমিতে চাষাবাদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই জমিতে চাষাবাদ করে আসা কৃষকরা বর্তমানে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। সেচ লাইসেন্স নিয়ে চলমান জটিলতা থেকে এ সংকটের উদ্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া বিপুলের নামে থাকা সেচ লাইসেন্সের আওতায় বিদ্যুৎ সংযোগটি গত ২২ জানুয়ারি জনৈক আব্দুল হালেকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিচ্ছিন্ন করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, বিপুলের সেচ স্কিমটি হালেকের স্কিমের সীমার মধ্যে এবং সরকারি হালটের উপর স্থাপন করা হয়েছিল, যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
এ প্রসঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া বিপুল বলেন, “ সেচ স্থাপনের জায়গাটি আমার নিজের এবং সঠিক যায়গাতেই তা বসানো হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এই সেচ স্কীম চলেছে কোন সমস্যা হয় নি কিন্ত এবার আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি। আমার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারনে অবিবেচনাপ্রসূত ভাবে ভরা সেচ মৌসুমে ৪০ টি সাধারণ কৃষক পরিবারের কথা বিবেচনায় নেয়া উচিৎ ছিলো। এবার আনুমানিক দুই থেকে আড়াই শত কাঠা জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হয়নি। যা এখনো পতিত রয়েছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অভিযোগকারী হালেকের নিজের সেচ লাইসেন্সটাই তো অবৈধ। সেই অবৈধ সংযোগধারীর অভিযোগে আমারটা বন্ধ হয়ে গেলো কিন্ত তার'টা জায়েজ করার প্রক্রিয়া চলমান । আশা করি, সেচ কমিটি ব্যাপারটা খতিয়ে দেখবে। দরিদ্র কৃষকদের কষ্ট লাঘব করে পুনরায় সেচ সংযোগটি চালু করবে।”
অভিযোগকারী আব্দুল হালেক জানান, “বিপুল তার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আমার স্কিমের মধ্যে অবৈধভাবে মোটর স্থাপন করেছিলো, যার জন্য আমি অনেক আগেই অভিযোগ করেছি। দীর্ঘদিন পর অবশেষে সেচ কমিটি বিষয়টি আমলে নিয়ে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেছে।
পার্শ্ববর্তী ডিপ টিউবওয়েল মালিক উপজেলা বি এন পির প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আওয়াল খান বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া বিপুলের সংযোগটি দুটি চলমান সেচ সংযোগের মাঝে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ ভাবে বসিয়ে অনেক আগেই বিরোধের সৃষ্টি করা হয়েছে। পাশাপাশি সেচ বোরিং এর জায়গাটাও সরকারি হাওলাট বলেই জানি। হালেকের অভিযোগ তদন্ত করেই বিপুলের সংযোগটি বাতিল করে সেচ কমিটি। তবে এতেকরে সংস্লিষ্ট স্কীমে চাষাবাদের কোন সমস্যা হবার কথা নয়। হালেকের পাম্পের পর্যাপ্ত সেচ স্বক্ষমতা রয়েছে পাশাপাশি আমার একটা ডীপ টিউবওয়েল রয়েছে যার স্বক্ষমতা ১২০০কাঠা। তারপরও বিপুলের স্কীমের জমির মালিকরা আমাদের পাম্প থেকে পানি নিতে চান না। তাই কেউ যদি বলে এখানে পানির সমস্যা রয়েছে তাহলে ভুল বলা হবে। মূল সমস্যা হলো মানসিকতায়।
এদিকে, স্থানীয় কৃষকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিপুলের সেচ স্কিমের আওতায় চাষাবাদ করে আসলেও হঠাৎ সেচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তারা চাষাবাদ করতে পারছেন না।
একজন কৃষক আফসোস করে বলেন, “ আওয়ামী লীগ নেতা বিপুলের নামে সেচ লাইসেন্স থাকায় আজ আমাদের এই বিড়াম্বনা। জমিতে পানির অভাবে ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না, অথচ সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে কৃষক লাল মিয়া জানান, “ভূ -প্রাকৃতিক গঠনের কারণে কাছের ডীপ টিউবওয়েল থেকে আমাদের জমিতে পানি আসে না । এদিকে অন্যরা চাষাবাদ শেষ করেছে, কিন্তু আমরা এখনো চাষ শুরু করতে পারিনি। এতে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।”
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন " কৃষকদের সেচ সমস্যার সমাধানে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। সেচ সংযোগ নিয়ে অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং কৃষকদের ক্ষতি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। ”
কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন "বিকল্প সেচ ব্যবস্থার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে, যাতে কৃষকরা ক্ষতির মুখে না পড়েন।”
স্থানীয় কৃষকরা সরকারের কাছে সেচ সংযোগ পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে তাদের চাষাবাদ নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে তাদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. মাহবুবুর রহমান খান, নির্বাহী সম্পাদক: মো. মিজানুর রহমান, বার্তা সম্পাদক: হাসান আইয়ুব বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়: ২নং শহীদ তাজউদ্দিন রোড, মগবাজার মোড় রাজ্জাক প্লাজা (৩য় তলা), ঢাকা -১২১৭।
মোবাইল: 01768387638 (সম্পাদক-প্রকাশক), 01716965924 (নির্বাহী সম্পাদক), 01727457562 (বার্তা সম্পাদক)।
আঞ্চলিক কার্যালয়: হাজেরা টাওয়ার (৩য় তলা), রেলওয়ে স্টেশন রোড (খালপাড়), নরসিংদী।
ই-মেইল: aiobhasanar@gmail.com
Copyright © 2025 Daily Janotar Desh. All rights reserved.