২০০৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আমার বড় ব্যাটা নিষাদ হুমায়ূনএর জন্ম। এ বছর বয়স ১৮ হবে, তাই নিয়ে উনার সে কি আনন্দ! ২ মাস ধরে থেকে থেকে নানা প্রশ্ন!!
“মা, ১৮ হলে আমি এডাল্ট হয়ে যাবো তাই না? তাহলে তো একা একা হাঁটতে যেতে পারবো, দোকানে যেতে পারবো। কিছু কিনতে হলে তোমার পারমিশন লাগবে না!”
কখনও আবার দুশ্চিন্তা মিশ্রিত আত্মকথন—
“১৮ হলে বাসার অনেকগুলা রেসপন্সিবিলিটি তো আমার নেয়া দরকার (🤔)… মাআআআ, আমি কি কোনো একটা পার্ট টাইম জব করতে পারি?”
১৮ তম জন্মদিনে কি উপায়ে চমকে দেয়া যায় ভেবে রেখেছিলাম। তার প্রিয় মানুষগুলোকে সাথে নিয়ে কাটাতে চেয়েছিলাম ৭ ফেব্রুয়ারির পুরো দিনটি।
৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সেই আয়োজন নিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল টেলিফোনে। নিষাদ এসে বলল “মা লিভিংরুমে কয়েকজন পুলিশ এসেছে, তোমার সাথে কথা বলতে চায়।”
আমি বসার ঘরে গেলাম। সিভিল ড্রেসের একজন ভদ্রলোক, সাথে ২ জন ইউনিফর্ম পরা মহিলা পুলিশ, ১ জন সাধারণ পোশাকের উপর ‘Detective Branch’ লেখা জ্যাকেট পরা তরুণী দাঁড়িয়ে। ভদ্রলোক বললেন, ম্যাম আপনাকে একটু আমাদের সাথে ডিবি অফিসে যেতে হবে, আমাদের স্যার একটু আপনার সাথে কথা বলবেন।
তারা সত্যিই গোয়েন্দা বিভাগের লোক কি না তা নিয়ে একটু বিভ্রান্ত হলাম এবং আইডি দেখতে চাইলাম। তিনি আমাকে তার পরিচয় নিশ্চিত করলেন এবং ১৫/২০ জন পুলিশের একটি দল সিঁড়িঘর থেকে আমার বসার ঘরে প্রবেশ করলো।
আমি পোশাক পরিবর্তন করে তাদের সাথে রওনা হলাম। পেছনে রেখে গেলাম আমার হতবিহ্বল ১৭ বছর ১১ মাস ২৯ দিন বয়সী নিষাদ আর ১৪ বছর ৫ মাস বয়সী তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং ঠান্ডা মাথার নিনিত কে।
গোয়েন্দা বিভাগের অফিসে কি কি হলো তা এই পোস্টের বিষয় না। তবে এটুকু বলি, লন্ডনে বসবাসরত একজন সাংবাদিক/এ্যাকটিভিস্টের ফেসবুক পোস্টে দেয়া একটি কাগজের ভিত্তিতে প্রাপ্ত অভিযোগের তদন্তের স্বার্থে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর কোনোপ্রকার সম্পৃক্ততা না থাকায় ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫ টায় আমাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়।
এদিকে প্যানিক এ্যাটাক হওয়ায় একাধিক ঘুমের ওষুধ খেয়ে জন্মদিনের প্রথম প্রহর হাসপাতালে কাটে নিষাদ হুমায়ূনএর।
বাবা নিষাদ… ১৮ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বয়স। ছোট ভাই নিনিত হুমায়ূন আর মা মেহের আফরোজকে নিয়ে ছোট্ট সংসারের যে বড় দায়িত্ব তুমি নিতে চাইছো, তার প্রস্তুতি তুমি প্রথম রাতেই নিয়ে নিলে। তারুণ্যের উজ্জ্বল আলোকিত জীবনের কঠিণ বাস্তবে তোমাকে স্বাগতম। নামের পেছনে হুমায়ূন পদবী থাকার আনন্দ যেমন আছে, তেমনি একাকিত্বের তীব্র বেদনাও আছে।
বিভ্রান্তির এই জগতে ভালো-মন্দ মিলিয়ে তুমি শক্ত ভাবে টিকে থাকো নিজ পরিচয়ে ও নিজ চিন্তায়- এটাই তোমার জন্য আমার দোয়া।
আর আমার পরিচিত/অপরিচিত যারা বিশ্বাস নিয়ে আমার পাশে ছিলেন, আমার বন্ধু/পরিবারকে একটা কল দিয়ে কিংবা একলাইন লিখে আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন তাদের কাছে হাতজোড় কৃতজ্ঞতা।
অন্যায় কে অন্যায় বলা এবং ন্যায়ের পক্ষে থাকবার শক্তি পরম করুণাময় আল্লাহ যেন সবসময়ই আমাকে দেন… 🙏🏼
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. মাহবুবুর রহমান খান, নির্বাহী সম্পাদক: মো. মিজানুর রহমান, বার্তা সম্পাদক: হাসান আইয়ুব বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়: ২নং শহীদ তাজউদ্দিন রোড, মগবাজার মোড় রাজ্জাক প্লাজা (৩য় তলা), ঢাকা -১২১৭।
মোবাইল: 01768387638 (সম্পাদক-প্রকাশক), 01716965924 (নির্বাহী সম্পাদক), 01727457562 (বার্তা সম্পাদক)।
আঞ্চলিক কার্যালয়: হাজেরা টাওয়ার (৩য় তলা), রেলওয়ে স্টেশন রোড (খালপাড়), নরসিংদী।
ই-মেইল: aiobhasanar@gmail.com
Copyright © 2025 Daily Janotar Desh. All rights reserved.