শিরোনাম :
আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নতুন চমক, ফিরে আসবে বীর দর্পে ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও গণসংহতি দিবসের বাস্তবতা বাউফলে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত আমার বাবা কর্নেল তাহের——স্মৃতিচারণে জয়া তাহের চট্টগ্রামে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর গণসংযোগে গুলি বর্ষণের নেপথ্যে এক আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডন ভোলার মানুষের ভালবাসায় সিক্ত ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর চট্টগ্রামে গণসংযোগ কালে বিএনপি প্রার্থী গুলি বিদ্ধ। সহযোগীকে নির্মমভাবে হত্যা। এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। Israt jahans unspeakable achievements জরাজীর্ণ ভবনে প্রাণভয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সারাদেশে উত্থাল পরিস্থিতি। নির্বাচনে কে দেবেন নেতৃত্ব? আর কে হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী?
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:১৯ অপরাহ্ন

রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের ভয়ংকর বিবাদ নিরসনে মধ্যস্হতাকারী মহাত্মা গান্ধীজি

Reporter Name / ৭৫ Time View
Update : রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫

ইন্টারনেট থেকে জনতার দেশ ঃ

সময়টা ১৯২০-২১। রবীন্দ্রনাথ তখন ভারতের বাইরে। মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা আন্দোলনের সময়ও সেটা। এই সময় রবীন্দ্রনাথ এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে এক বিরোধ শুরু হয়। সেই বিতর্কের আঁচ শুধু সংবাদমাধ্যমে লেগেছিল শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে বক্তৃতাও শুরু হয়ে যায়। সাংবাদিক নলিনীকান্ত সরকার তাঁর আত্মজীবনী, ‘আসা যাওয়ার মাঝখানে’ বইয়ে এই বিষয়ে যে স্মৃতিচারণ করেছেন, তা এখানে হুবহু তুলে দেওয়া হল।

মহাত্মা গান্ধীর এই অহিংস আন্দোলন আরম্ভ হওয়ার সময় (১৯২০-২১) রবীন্দ্রনাথ ভারতের বাইরে ছিলেন। আমেরিকা ও ইয়োরোপ ভ্রমণ করে তিনি ১৯২১-এর ১৬ জুলাই শান্তিনিকেতনে ফিরে এলেন। বিদেশে থাকাকালেই কবি ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থার প্রতি অবহিত ছিলেন। শান্তিনিকেতনে এসে তিনি ১০ অগস্ট ‘শিক্ষার মিলন’ নামে একটি প্রবন্ধ পাঠ করলেন। সেই সময়কার অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করাই ‘শিক্ষার মিলন’ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য।

প্রবন্ধ পাঠের পর দিনই তিনি কলকাতায় এলেন। কলকাতাতেও তাঁর ‘শিক্ষার মিলন’ পাঠের ব্যবস্থা হল। এইজন্যে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে ইউনিভর্সিটি ইস্টিটিউটে একটা সভা আহ্বান করা হল, ১৫ অগস্ট তারিখে। সভাপতি স্যার আশুতোষ চৌধুরী। সেখানেই রবীন্দ্রনাথ ‘শিক্ষার মিলন’ পড়লেন।

প্রতিক্রিয়া আরম্ভ হল কংগ্রেসি মহলে। কারণ এই প্রবন্ধে তখনকার অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি কটাক্ষপাত ছিল। ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তখন হাওড়া জেলা কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট। ‘শিক্ষার বিরোধ’ প্রবন্ধ লিখে শরৎচন্দ্র রবীন্দ্রনাথের ‘শিক্ষার মিলন’ এর প্রতিবাদ করলেন।

শিক্ষার মিলনে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
“এ কথা মানতেই হবে যে, আজকের দিনে পৃথিবীতে পশ্চিমের লোক জয়ী হয়েছে। পৃথিবীকে তারা কামধেনুর মতো দোহন করছে, তাদের পাত্র ছাপিয়ে গেল। আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে হাঁ করে তাকিয়ে আছি, দিন দিন দেখছি আমাদের ভোগে অন্নের ভাগ কম পড়ে যাচ্ছে। ক্ষুধার তাপ বাড়তে থাকলে ক্রোধের তাপও বেড়ে ওঠে; মনে মনে ভাবি যে-মানুষটা খাচ্ছে ওটাকে একবার সুযোগ মতো পেলে হয়। …বিশ্বকে ভোগ করার অধিকার ওরা কেন পেয়েছে? নিশ্চয় যে-কোনও একটা সত্যের জোরে।”

শরৎচন্দ্র তাঁর ‘শিক্ষার বিরোধ’ প্রবন্ধে বললেন,
“আজকের দিনে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে পৃথিবীর বড় বড় ক্ষীর-ভাণ্ডেই সে মুখ জুবড়ে আছে,- তার পেট ভরে’ দুই কস বেয়ে দুধের ধারা নেমেছে –কিন্তু আমরা উপবাসী দাঁড়িয়ে আছি।

এ একটা fact; আজকের দিনে কিছুতেই একে ‘না’ বলবার পথ নেই,- আমরা উপবাসী রয়েছি সত্যই কিন্তু তাই ব’লেই কি এই কথা মানতেই হ’বে যে, এ অধিকার পেয়েছে তারা নিশ্চয়ই একটা সত্যের জোরে? এবং এই সত্য তাদের কাছ থেকে আমাদের শিখতেই হ’বে। লোহা মাটিতে পড়ে, জলে ডোবে, এ একটা fact, কিন্তু একেই যদি মানুষে চরম সত্য মে’নে নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে থাকত ত’ আজকের দিনে নীচে, জলের উপর এং ঊর্ধ্বে আকাশের মধ্যে লোহার জাহাজ ছুটে বেড়াতে পারত না। উপস্থিতকালে যা fact তাই কেবল শেষ কথা নয়। মাসের ১লা তারিখে যে লোকটা তার বিদ্যের জোরে আমার সারা মাসের মাইনে গাঁট কেটে নিয়ে ছেলেপুলে সমেত আমাকে অনাহারে রাখলে, কিম্বা মাথায় একটা বাড়ি মে’রে সমস্ত কেড়ে নিয়ে রাস্তার ওপরে চাটের দোকানে বসে’ ভোজ লাগালে – এ ঘটনা সত্য হলেও কোন সত্য অধিকারে বলতে পারব না, কিম্বা এ দুটো মহাবিদ্যে শেখবার জন্যে তাদের শরণাপন্ন হ’তে হ’বে এও স্বীকার করতে পারব না। তা ছাড়া গাঁটকাটা কিছুতেই ব’লে দেবে না পয়সা কোথায় রাখলে কেটে নেওয়া যায় না, অথবা ঠেঙাড়েও শিখিয়ে দেবে না কি ক’রে তার মাথায় উলটে লাঠি মে’রে আত্মরক্ষা করা যায়। এ যদি বা শিখতেই হয়, ত’ সে অন্য কোথাও- অন্ততঃ তাদের কাছে নয়। কবি জোর দিয়ে বলেছেন, এ কথা মানতেই হ’বে পশ্চিম জয়ী হ’য়েছে এবং সে শুধু তাদের সত্য বিদ্যার অধিকারে। হয়তো মানতেই হ’বে তাই। কারণ সম্প্রতি সেই রকমই দেখাচ্ছে। কিন্তু কেবলমাত্র জয় করেছে বলে’ এই জয় করার বিদ্যাটাও সত্য বিদ্যা, অতএব শেখা চাই-ই, এ কথা কন-মতেই মেনে নেওয়া যায় না। *** দুর্যোধন একদিন শকুনির বিদ্যার জোরে জয়ী হ’য়ে পঞ্চপাণ্ডবকে দীর্ঘকাল ধরে’ বনে-জঙ্গলে উপবাস করতে বাধ্য করেছিল, সেদিন দুর্যোধনের পাত্র ছাপিয়ে গিয়েছিল, তার ভোগের অন্নে কোথাও একটা তিলও কম পড়েনি, কিন্তু তাকেই সত্যি বলে’ মে’নে নিলে যুধিষ্ঠিরকে ফি’রে এসে সারাজীবন কেবল পাশাখেলা শিখেই কাটাতে হোতো। সুতরাং সংসারে জয় করা বা পরের কে’ড়ে নেওয়ার বিদ্যাটাকেই একমাত্র সত্য ভে’বে লুব্ধ হ’য়ে ওঠাই মানুষের বড় সার্থকতা নয়।”

১৮ অগাস্ট রবীন্দ্রনাথ আবার ‘শিক্ষার মিলন’ প্রবন্ধটি পাঠ করলেন অ্যালফ্রেড থিয়েটারে। সভাপতিত্ব করলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। এবারের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য- টিকেট বিক্রি ক’রে খুলনার দুর্ভিক্ষে অর্থ সাহায্য করা। রবীন্দ্রনাথের “শিক্ষার মিলন” ও শরৎচন্দ্রের “শিক্ষার বিরোধ”-এর প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সর্বসাধারণের মধ্যে। সাংবাদিকরা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন, বিভিন্ন আড্ডা মজলিসে বিদগ্ধ ব্যক্তিরা অনুকূল-প্রতিকূল উভয় প্রকার সমালোচনাতে পঞ্চমুখ হয়েছেন।

‘ভারতী’র আড্ডায় সকলেই রবীন্দ্রানুরাগী। এই রবীন্দ্র-ভক্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গোঁড়া গান্ধীভক্তও আছেন। এঁরাই পড়েছেন দারুণ সমস্যার মধ্যে; শ্যাম রাখি, না কুল রাখি। গজেনদার আড্ডায় গেলাম, সেখানে গান্ধীভক্তের সংখ্যাই বেশি। বলা বাহুল্য এই সব বিভিন্নমুখী সমালোচনার সুরঞ্জিত সংবাদ রবীন্দ্রনাথের কর্ণগোচর করবার অগ্রদূতের অভাব ছিল না।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর মনের কথা স্পষ্ট ক’রে জানাবার জন্যে আবার একটি প্রবন্ধ লিখলেন: ‘সত্যের আহ্বান’। ‘শিক্ষার মিলনে’ যে-সব প্রচ্ছন্ন ছিল, ‘সত্যের আহ্বানে’ তা বিশদভাবে ব্যক্ত করলেন। প্রবন্ধটিতে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি যেমন অকুণ্ঠ শ্রদ্ধানিবেদন, তাঁর কর্মধারার প্রতি তেমনি অবিমিশ্র অশ্রদ্ধেয় উক্তি। চরখা, বিদ্যালয় বর্জন, বিলিতি কাপড় পোড়ানো প্রভৃতির তীব্র সমালোচনা তিনি করলেন ‘সত্যের আহ্বানে’।

মহাত্মা গান্ধী এই সময় কলকাতায় ছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের কাছে সাক্ষাৎকার নিবেদন করলেন। ৬ সেপ্টেম্বর এই সাক্ষাৎকারের দিন নির্দিষ্ট হ’ল। মহাত্মা গান্ধীর অনুগামীরা এই সাক্ষাৎকারের খবর আগেই পেয়েছিলেন। বিচিত্রা ভবনের দোতলায় এই সাক্ষাৎকার চলেছে। মহামতি এন্ড্রুজ ছাড়া আর কেউই নেই এই সাক্ষাতের সময়। এদিকে বিচিত্রা ভবনের নিচে, উঠোনের উপর কংগ্রেস কর্মীদের সমাবেশ। ‘শিক্ষার মিলন’ ও ‘সত্যের আহ্বানে’-র উত্তর দেবার জন্যে তাঁরা তৈরি হয়েই এসেছেন। উপরে মহাত্মা ও মহাকবির আলোচনার অধিবেশন চলেছে, নিচে ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গণে সমবেত জনতা সঙ্গে-আনা বিলিতি কাপড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বহ্ন্যুৎসব করলেন।

চার ঘণ্টা কাল দুই মহাপুরুষের আলোচনা চলল। আলোচনার বিবরণ সম্পূর্ণ গোপন ছিল। এন্ড্রুজ সাহেবও প্রকাশ করেননি।

(কৃতজ্ঞতা স্বীকার :- অনঙ্গ পাখিরা।)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category