শাহ আলী তৌফিক রিপন,বিশেষ প্রতিনিধি:
পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণে। বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য মৃৎশিল্প এখনো জীবন্ত রয়েছে এই গ্রামে। পরিবারভিত্তিক এই শিল্পে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী, পুরুষ, কিশোর-কিশোরীসহ পরিবারের সব সদস্য।
শনিবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে লস্করপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের ৫ থেকে ৭টি পরিবার মাটি দিয়ে তৈরি করছেন নানান রকমের শিল্পপণ্য— পুতুল, ষাঁড়, গরু, ঘোড়া, হাতি, থালা-বাসনসহ নানা খেলনা ও গৃহসজ্জার সামগ্রী। এসব তৈরির জন্য ইতোমধ্যে পুকুড়িয়া হাওর ও মাটিয়ারকুড়ি বিল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে কাদা মাটি। তৈরি শেষ হলে চলছে রঙ ও ভার্নিশের কাজ, অনেক ক্ষেত্রে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে চিত্রকর্মও।
৬০ বছর বয়সী মৃৎশিল্পী নওমিতা রাণী জানান, “আমাদের পরিবার শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই কাজ করে আসছে। পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, ঈদ কিংবা স্থানীয় মেলা এলে কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। তখন পরিবারের ছোট-বড় সবাই সহযোগিতা করে। আমরা বাপ-দাদার পেশাকে ধরে রেখেছি, কারণ আমাদের আর কোনো পেশা জানা নেই।”
তবে এই শিল্প চর্চা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও পরিশ্রমের। নেই আধুনিক কোনো প্রযুক্তি কিংবা যন্ত্রপাতির সহায়তা। সম্পূর্ণ হাতে গড়া এসব পণ্য আজও বাজারে কদর পাচ্ছে, তবে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা।
মৃৎশিল্পীদের কাজ দেখতে আসা নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হারিফ উদ্দিন হানিফ বলেন, “এই শিল্প আমাদের বাঙালিয়ানা ও সংস্কৃতির জীবন্ত প্রতীক। যেভাবে তারা কাজ করছেন, তা না দেখলে বোঝা যাবে না কতোটা নিষ্ঠা ও শ্রম লাগে এতে।”
নওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সালাহউদ্দিন সালাম বলেন, “এই শিল্পীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা গেলে একদিকে যেমন এই ঐতিহ্য রক্ষা পাবে, অন্যদিকে নতুন প্রজন্মও আগ্রহী হবে এই শিল্পে।”
একসময় প্রায় প্রতিটি গ্রামেই দেখা যেত এমন মৃৎশিল্পের চর্চা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে গেলেও লস্করপুরের এই পরিবারগুলো এখনও সেই ধারা বহন করে চলেছে। প্রয়োজন শুধু একটু যত্ন ও সহযোগিতা— তাহলেই বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প ফিরিয়ে পাবে তার হারানো গৌরব।