বিনোদন ডেক্স: ভারতের ◊ বিখ্যাত সংগীত শিল্পী লতা মাঙ্গেশকার কে একবার এক ইন্টারভিউয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল- পুনঃজন্মে কি হয়ে জন্ম নিতে চাও?
লতা মাঙ্গেশকার উত্তর দেন- আর যাই হই না কেন, লতা হয়ে জন্ম নিতে চাই না! লতা হওয়ার অনেক কষ্ট!
সূরের স্বরসতী সুন্দরের পুজারী লতা মাঙ্গেশকারের ছোট বেলায়
স্বপ্ন ছিলোঃ “বিয়ে করলে সুদর্শন ছেলেকেই করবো।”
দরিদ্র পরিবারে জন্ম। ছোট ছোট ভাই-বোনদের মানুষ
করতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছিলো সুদর্শন পুরুষ জীবন
সঙ্গীর কথা। সঙ্গীত জগতে সুখ্যাতি পেলেন।
লতা জ্বীর ছোট ভাই হৃদয় ক্রিকেট প্লেয়ার। হৃদয়ের বন্ধু ক্রিকেটার রাজ সিং। জাতীয় দলের খেলোয়াড়।
১৯৫৫ সনের কথা রাজ সিং ক্রিকেট টিমের সাথে
বোম্বে এলেন। টিমের সকল সদস্যসহ হোটেলেই
উঠেছিলো। হৃদয়, রাজ সিংকে তার বড় দিদি লতা জ্বীর বাসায় ডিনারের নিমন্ত্রণ করলো। রাজ সিং লতা জ্বীর কণ্ঠের প্রমিক।
কুড়ি বছরের ছয় ফুট, গায়ের রং দুধে আলতা যুবক
দুঙ্গারপুরের রাজ ঘরানার মহারাজের কনিষ্ঠ পুত্র
রাজ সিং।
লতা জ্বী, রাজ সিংকে প্রথম দেখেই লতার অন্তরের
সেই প্রেম সুদর্শন পুরুষ জেগে উঠে। ভুলেই গিয়েছিলো
আদরের ছোট ভাইয়ের বন্ধু। ভুলেই গিয়েছিলো,
আমার চেয়ে বয়সে ছয় বছর ছোট।
প্রেম কি বয়সের বাঁধা মানে?
ছোটবেলার সেই স্বপ্ন হৃদয় নাড়া দিয়ে উঠলো।
রাজ সিং যতদিন বোম্বে ছিলেন, প্রতি রাতে হৃদয়ের
সাথে লতা জ্বীর বাসায় ডিনার খেতে আসতো।
লতা জ্বীও নিজ হাতে সুস্বাদু রান্না করতেন।
দর্শনেই তাদের প্রেমের গভীরতা বেড়ে যায়।
রাজ সিং দিল্লী চলে এলো। প্রতি রাতেই ফোনে তাদের
প্রেমের আলাপ। এভাবেই এক বছর পাড় হয়ে গেলো।
রাজ সিং এর অভিবাবক বড় ভাই-বোনদেরকে
জানালেন তার প্রেমের কাহিনী। এবং বিয়ের প্রস্তুতির কথা।
কিন্তু বেকে বসলেন বড় ভাই/বোন। এবং বললেনঃ রাজ, তোমার মনে আছে, বাবা মৃত্যর আগ মুহূর্তে তোমাকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলো, বিয়ে করলে আমাদের রাজ পরিবারের মেয়ে বিয়ে করবে।
কোন ছোট পরিবারের মেয়ে নয়। বাবা, কড়াভাবে নিষেধ করেছিলেন। লতা জ্বীকে আমরা সন্মান করি। তবে বাবার প্রতিজ্ঞা আমাদের কাছে অনেক বড়।”
রাজ সিং তার পরিবারের কথা লতা জ্বীকে জানিয়ে
দিলে। লতা জ্বীর স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যায়।
গান ছেড়ে দেন।
ইতিহাস বলে ১৯৫৬-৫৭ লতার কোন গান রেকর্ড
হয় নি। লতার খারাপ সময় পাশে এসে দাড়ালেন হেমন্ত
মুখোপাধ্যায় এবং উনার স্ত্রী বেলা দেবী। বেলা দেবী সর্বক্ষণ লতার পাশে থাকতো। হেমন্ত বাবু রাজ সিংকে সব খুলে বলে। লতা আর গান করবে না।
রাজ সিং, লতা জ্বীকে মিট্টু বলে ডাকতো।
রাজ সিং বলেছিলো, মিট্টু, এই পৃথিবীর বুকে আমাদের
প্রেমকে সমর্থন দিলো না। স্বর্গে আমরা এক হবো। কথা দেও পৃথিবীর বুকে আমরা আমাদের কর্মকে ভালোবেসে যাবো। কেউ বিয়ে করবো না। তুমি গানের জগতে ফিরে যাও। আর আমি ক্রিকেট জগতে।”
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় লতা জ্বী ফিরে এলেন
সঙ্গীত ভুবনে।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গৌরী প্রসন্নকে ঘটনা সব বলে,
বললেনঃ “তুই একটি গান লিখে দে, আমি সুর করবো।”
১৯৫৭ সনে পুজোয়ে বের করলেনঃ
“প্রেম একবার এসেছিলো জীবনে, আমার দুয়ারে প্রান্তে,
সেতো আর নিরুপায়।”
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছবি বানালেন নিজের প্রযোজনায়
“বিশ সাল বাদ।” লতাকে দিয়ে এমন গান গাওয়ালেন।
লতা জ্বী জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার পেলো।
তারা দুজনের কেউই আর বিয়ে করলেন না।
১২ই সেপ্টম্বার ২০০৯ রাজ সিং মৃত্যবরণ করে।
রাজ সিং এর বাড়ীতে শুধুই লতা জ্বীর সকল গানের
রেকর্ড ছিলো।
সংগৃহীত তথ্য :